আইপিএস এখন বহুল জনপ্রিয়। লোডশেডিং থেকে পরিত্রাণের সহজ উপায় বাৎলে দিয়েছে এই আই পি এস নামক যন্ত্রটি। আজকাল লোডশেডিং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনুষঙ্গই বলা চলে। লোডশেডিং এর ফলে জীবনযাপন, ব্যবসা-বাণিজ্য সহ প্রায় সবকিছুই স্থবির হয়ে পড়ে। বিশেষত বাসা-বাড়িতে শিশু, বয়স্ক লোক ও অসুস্থদের সমস্যা বেশি হয়।
এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আজকাল অনেকেই “আইপিএস” কিনছেন বা কেনার কথা ভাবছেন। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ হওয়ায় এতে কোনো ঝামেলা নেই। আইপিএসএর মাধ্যমে বাতি, ফ্যান, ফ্রিজ, কম্পিউটার, টিভি, ভিডিও প্লেয়ার প্রভৃতি প্রায় সব ধরনের ইলেকট্রিক বা ইলেকট্রনিক যন্ত্রই চালানো যাচ্ছে।
চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকায় আই পি এস ব্যবহারে কোনো ফুয়েল বা লুব্রিকেন্টেরও প্রয়োজন হয় না। ব্যাকআপ পাওয়া যায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। তবে আইপিএস সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানার ফলে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের বিড়ম্বনার সম্মুখীন হচ্ছেন। আসুন আইপিএস সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নিই। একই সাথে বাজারে বহুল প্রচলিত একটি সার্কিট বোর্ড দিয়ে আইপিএস তৈরি করাও শিখবো।পরিচ্ছেদসমূহ [আড়াল করুন]
- 1 আইপিএস কী
- 2 আই পি এস বানাতে আমাদের যা যা লাগবে
- 3 এবার কাজ শুরু করা যাক
- 4 ট্রান্সফরমার এর ট্যাপ ডিজাইন
- 5 যেভাবে ঝালাই করবেন
- 6 যেভাবে আইপিএস বোর্ডকে ওয়্যারিং করতে হবে
- 7 সার্কিট বোর্ডের পিন কানেকশন
- 8 সংযোগ দেবার পূর্বে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ
- 9 পরিশিষ্ঠঃ
আইপিএস কী
IPS এর অর্থ Instant Power Supply. অর্থাৎ আই পি এস এমন একটি ইলেকট্রনিক ও যান্ত্রিক ব্যবস্থা যার মাধ্যমে ব্যাটারীতে সঞ্চিত ডিসি শক্তিকে এসি প্রবাহে রূপান্তর করে বৈদ্যূতিক লোড যেমন বাতি, পাখা ইত্যাদি চালানো যায়।যখন বিদ্যূৎ সরবরাহ থাকে তখন চার্জারের মাধ্যমে ব্যাটারীকে চার্জ করে বিদ্যুৎ শক্তি সঞ্চয় করা হয়। আর যখন বিদ্যূৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় তখন উপযুক্ত যন্ত্রাংশের মাধ্যমে ব্যাটারী হতে সঞ্চিত শক্তিকে প্রয়োজনীয় রূপে পরিবর্তন করে বৈদ্যুতিক লোড চালনা করাহয়। এই যন্ত্রের নাম আইপিএস। এবার আসি আসল কথায়, নিজে নিজে আই পি এস কিভাবে বানাবো-আই পি এস বানাতে আমাদের যা যা লাগবে
- সোল্ডারিং আয়রন ও রাং, রজন।
- প্লায়ার্স
- স্ক্রু ড্রাইভার
- ড্রিল মেশিন
- সুন্দর একটি IPS বক্স
- On Off সুইচ
- 3 pin সকেট
- প্রয়োজনীয় স্ক্রু ও প্রয়োজনীয় সংযোগ তার।
- একটি ৬৫০ ভিএ (VA) ট্রান্সফরমার (12-0-12V to 240V)
- অনেক গুলো খুটি (সার্কিট বোর্ড বসানোর জন্য)
- একটি নাতাসা বা বিমটেক্স সার্কিট বোর্ড ( এটা স্টেডিয়াম মার্কেটে পাবেন)
- ডিসি মোটা ক্যাবল – লাল ২.৫ ফিট ও কালো ২.৫ ফিট
- কুলিং ফ্যান
- একটা হার্জ মিটার (৭০০ টাকা নেবে)
- একটা ভোল্ট মিটার
এবার কাজ শুরু করা যাক
প্রথমে ক্যবিনেটের ভিতরে ট্রান্সফরমার বসানোর যায়গা ও সার্কিট বসানোর যায়গা ড্রিল দিয়ে ছিদ্র করে নিন। তার পরে ট্রান্সফরমার স্ক্রু দিয়ে ক্যবিনেটের সাথে ভালো ভাবে আটকে দিন।ট্রান্সফরমার টেকনিশিয়ান দের দিয়ে এইভাবে ট্যাপ (Tap) বের করে নিবেন- যেভাবে ঝালাই করবেন
ক্যাবিনেটের যে পাশে থ্রি-পিন প্লাগ আর কুলিং ফ্যান থাকে এবার কালো তার সেই পাশে নিচের দিকে সমান্তরালে তিনটা ছিদ্র থাকে তার একটা দিয়ে ঢুকিয়ে নাতাসা বা বিমটেক্স বোর্ডের ছবিতে দেওয়া স্থানে ভালো করে ঝালাই করে দিন।- এরপরে লাল তারটি ট্রান্সফরমারের লো ভোল্ট সাইডের যে তিনটা তার থাকে তার মাঝ খানেরটাতে ভালো করে ঝালাই করে দিন নিচের ছবির মতো।
-
- এরপরে লো ভোল্ট সাইডে বাকি যে দুইটা মোটা তার থাকে তার একটা বোর্ডের একটা হিটসিংকে আর অপরটা অন্য হিটসিংকে স্ক্রু দিয়ে ভালো করে লাগান। (উপরের ছবি দ্রষ্টব্য)
সার্কিট বোর্ডের পিন কানেকশন
উপরের চিত্রে বাঁ থেকে ৬টা পিন পয়েন্ট দেখতে পাচ্ছেন।- ১ নং পিনে খেয়াল করুন, একটা ক্যপাসিটর কে বাড়ির লাইনের নিউট্রালের সাথে সিরিজে লাগিয়ে দিন।
- ২নং পিনে আপনার আইপিএস এর এসি ইনপুট কর্ড এর ফেস (Phase) তারের সংযোগ দিন।
- ৩নং পিনে আপনার ইনভারটার ট্রান্সফরমার এর আউটপুটের তার (যেটা দিয়ে ২৮০/৩০০ ভোল্ট বেরুবে ) সংযোগ দিন।
- ৪নং পিন থেকে তার নিয়ে ইনভারটার এর যে আউটপুট সকেট আছে তার ডান পাশের পিনে ভালো করে ঝালাই করে দিন।
- ৫নং পিন আমরা ব্যবহার করবো কারেন্ট আসলে ইনভার্টার এর মাধ্যমে ব্যটারি চার্জ করার জন্য। এটার সংযোগ হবে পিন থেকে তার নিয়ে ট্রান্সফরমার এর যে ট্যাপ ১৪০ ভোল্ট সেটার সাথে।
- ৬নং পিন বাড়ির নিউট্রাল (ইনপুট কর্ডের নিউট্রাল) + ইনভারটার ট্রান্সফরমার এর নিউট্রাল এর সাথে এক করে ভালো করে ঝালাই করে দিন। ব্যাস আমাদের ওয়্যারিং শেষ। এখন সংযোগ দেবার পূর্বে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে।
সংযোগ দেবার পূর্বে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ
- আউটপুটে ৫০ হার্জ করতে হবে হার্জ মিটার দিয়ে মেপে
- আউটপুট ২৪০ ভোল্ট করতে হবে ভোল্ট মিটার দিয়ে মেপে
- আউটপুট লাইটের উজ্জ্বলতা ঠিক করতে হবে যত ওয়াটের আইপিএস ততো ওয়াটের লাইট জ্বালিয়ে সার্কিটে থাকা ভেরিয়েবেল ঘুরিয়ে
- ব্যটারি চার্জ এম্পিয়ার ঠিক করতে হবে (এম্পিয়ার দিতে হবে ব্যটারির এম্পিয়ারকে ৮ দিয়ে ভাগ দিলে যা আসে ততোটুকু) ব্যাটারি পোস্টের যে কোনো একটা তার খুলে সিরিজে একটা এম্পিয়ার মিটার দিয়ে মাপলে বোঝা যাবে এম্পিয়ার কত যাচ্ছে
- ব্যাটারি চার্জ ভোল্ট ঠিক করতে হবে মানে কত ভল্টে গেলে অটো কাট হবে
পরিশিষ্ঠঃ
আশাকরি যাদের হাল্কা টেকনিক্যাল/ইলেকট্রনিক্স জ্ঞান আছে তারা তৈরি করতে পারবেন। আর তা করতে পারলেই আমার এই কষ্ট করে লেখার স্বার্থকতা। ভুল হতে পারে, ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। সকল কে ধন্যবাদ।